কৈবর্ত বিদ্রোহ ছিল পাল যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ, যা ১১শ শতকের শেষভাগে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহটি ঘটে পাল রাজবংশের দুর্বল শাসনামলে, যখন কৃষিজীবী কৈবর্ত সম্প্রদায় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।
পটভূমি:
কৈবর্তরা ছিল একটি মৎস্যজীবী এবং কৃষিজীবী সম্প্রদায়, যারা প্রধানত উত্তরবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করত। পাল শাসনের সময়, রাজস্ব নীতি এবং জমিদারদের অত্যাচারে তাদের জীবনযাপন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পাল শাসক মাহীপাল এবং তার উত্তরসূরিদের দুর্বল শাসন ক্ষমতা এবং দুর্নীতি বিদ্রোহের মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।
বিদ্রোহের নেতৃত্ব:
কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন দিব্য নামে এক প্রভাবশালী কৈবর্ত নেতা। তিনি উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চলে বিদ্রোহের সূচনা করেন। দিব্য এবং তার সঙ্গীরা বরেন্দ্র অঞ্চলে পালদের শাসনব্যবস্থা ভেঙে দেন এবং স্বাধীনভাবে শাসন শুরু করেন।
বিদ্রোহের ধারা:
১. দিব্য প্রথমে বরেন্দ্র অঞ্চলে পাল সেনাদের পরাজিত করেন।
২. তার উত্তরাধিকারী রুদ্র ও ভীম এই বিদ্রোহকে আরও বিস্তৃত করেন এবং শক্তিশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. বিদ্রোহীরা পাল শাসকদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে একাধিক অঞ্চল দখল করে।
পরিণাম:
পাল রাজা রামপালের শাসনামলে বিদ্রোহটি চূড়ান্তভাবে দমন করা হয়। রামপাল বরেন্দ্র অঞ্চল পুনর্দখল করেন এবং কৈবর্ত শাসকদের পরাজিত করেন।
বিদ্রোহ দমনের পর পাল রাজা শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন এবং প্রজা সাধারণের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কৈবর্ত বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আন্দোলন। এটি শুধু সামরিক সংগ্রাম ছিল না, বরং শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রান্তিক মানুষের আত্মপ্রকাশের প্রতীক। এই বিদ্রোহ মধ্যযুগীয় বাংলার শাসনব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে প্রজাস্বার্থে শাসকদের মনোযোগী হতে বাধ্য করে।