চন্দ্রাবতীর রামায়ণ বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাকাব্যিক রচনা। এটি রচনা করেছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, যিনি ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ মূলত ভিন্ন আঙ্গিকে এবং নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে রামায়ণের কাহিনী পুনর্গঠিত করেছে। এটি কেবল বাংলা সাহিত্যের এক মূল্যবান নিদর্শন নয়, বরং এটি নারীবাদের এক প্রাচীন নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত হয়।
রচনার পটভূমি
চন্দ্রাবতীর পিতা দ্বিজবংশ দাস একজন কবি ছিলেন এবং তিনিই চন্দ্রাবতীর সাহিত্যিক অনুপ্রেরণার মূল উৎস। তাঁর রামায়ণ রচনার পেছনে একটি ব্যক্তিগত গল্পও রয়েছে। চন্দ্রাবতী তার প্রেমিক জয়চন্দ্রের বিশ্বাসঘাতকতার পর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি একপ্রকার ক্ষোভ নিয়ে রামায়ণের পুনর্গঠন শুরু করেন।
চন্দ্রাবতীর রামায়ণের বৈশিষ্ট্য
১. নারী চরিত্রের ওপর জোর: চন্দ্রাবতীর রামায়ণে সীতা এবং অন্যান্য নারী চরিত্রদের কষ্ট ও অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে নারীদের প্রতি সমাজের অবিচার এবং তাঁদের আত্মত্যাগের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
২. মূলধারার ব্যতিক্রম: ঐতিহ্যবাহী রামায়ণের তুলনায় চন্দ্রাবতীর রামায়ণে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ চরিত্রদের প্রতি সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়। রামের চরিত্রকে আদর্শ নায়ক হিসেবে নয়, বরং এক মানবিক চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে।
৩. গান ও লোকসংস্কৃতির ব্যবহার: এই রচনায় বাংলার লোকসংস্কৃতি এবং সংগীতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এতে সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য।
সাহিত্যে অবদান
চন্দ্রাবতীর রামায়ণ বাংলা সাহিত্যের ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি কেবল রামায়ণের কাহিনী নয়, বরং এটি একজন নারী কবির সৃজনশীলতা, ব্যথা এবং সমাজের প্রতি তাঁর বিদ্রোহের প্রতিচ্ছবি। যদিও তাঁর পুরো রচনাটি সংরক্ষিত হয়নি, তারপরও এটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
চন্দ্রাবতীর রামায়ণ বাংলার সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে নারী দৃষ্টিকোণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি বাংলা ভাষার প্রাচীন সাহিত্যধারায় চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে।